
ই-স্পোর্টস বিশ্বকাপ দাবায় টাকার ঝলকানিই কি ফিদেকে নাখোশ করেছে?
দাবা, যাকে আমরা শতাব্দীর প্রাচীন বোর্ড গেম হিসেবে জানি, দাবা এবার প্রথমবারের মতো ইস্পোর্টস বিশ্বকাপে (Esports World Cup) অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সৌদি আরবের রিয়াদে জুলাই-আগস্টে অনুষ্ঠিতব্য এই টুর্নামেন্টে বিশ্বের শীর্ষ খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে আয়োজকরা। এর মধ্যে রয়েছেন দাবার
বড় তারকা ম্যাগনাস কার্লসেনসহ প্রায় সকল শীর্ষ খেলোয়াড়। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে দাবার আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিদে (FIDE)।
কেন ফিদে অসন্তুষ্ট? নিয়ন্ত্রণ ও স্বীকৃতির প্রশ্ন?
ফিদে বিশ্বব্যাপী দাবার প্রধান নিয়ন্ত্রক সংস্থা। তবে, ইস্পোর্টস বিশ্বকাপে দাবা অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে ফিদের কোনো সরাসরি ভূমিকা নেই। এটি একটি বেসরকারি ইভেন্ট, যেখানে ফিদের অনুমোদন ছাড়াই দাবাকে ইস্পোর্টসের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। ফলে, ফিদে তাদের নিয়ন্ত্রণ হারানোর আশঙ্কা করছে।
দাবার ঐতিহ্য কি ডিজিটাল রূপে হারিয়ে যেতে পারে?
দাবার শিকড় প্রাচীন ইতিহাসে প্রোথিত, কিন্তু ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে এর জনপ্রিয়তা বহুগুণ বেড়েছে। ফিদে দাবাকে একটি মর্যাদাপূর্ণ খেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। কিন্তু ইস্পোর্টসের সঙ্গে একীভূত হলে দাবা "ভিডিও গেম" এর কাতারে চলে যেতে পারে—যা এর ঐতিহ্যবাহী ইমেজকে ক্ষুণ্ন করতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।
সৌদি আরবের মতো দেশগুলো বড় অর্থ পুরস্কার দিয়ে দাবাকে আকর্ষণীয় করছে, যা ফিদে-আয়োজিত টুর্নামেন্টগুলোকে অনেকাংশে ছাড়িয়ে যেতে পারে। এতে ফিদের আর্থিক মডেল ও স্পনসরশিপ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এছাড়া, খেলোয়াড়দের নিয়মিত টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণে বিভ্রাট দেখা দিতে পারে। বড় অর্থের আকর্ষণে খেলোয়াড়রা বোর্ড গেমের পরিবর্তে অনলাইন গেমের প্রতি বেশি ঝুঁকে পড়তে পারেন।
ফিদে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কী বলছে?
ফিদে এখনও এই বিষয়ে নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রেখেছে। তবে, সংস্থাটির কিছু কর্মকর্তা গোপনে এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। তাদের আশঙ্কা, দাবা যদি ইস্পোর্টসের অংশ হয়ে যায়, তাহলে ভবিষ্যতে অলিম্পিক বা অন্যান্য প্রথাগত ক্রীড়া ইভেন্টে এর স্বীকৃতি ক্ষুণ্ন হতে পারে। ফিদে দীর্ঘদিন ধরে অলিম্পিকে দাবাকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।বিশ্বের শীর্ষ খেলোয়াড়রা এই সুযোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। ম্যাগনাস কার্লসেনের মতো তারকারা ইতিমধ্যেই অংশগ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। অনেকের মতে, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে দাবার সম্প্রসারণ খেলাটির জনপ্রিয়তা আরও বাড়াবে।
আমি মনে করি, ফিদে যদি এই ইভেন্টের সঙ্গে সহযোগিতা করে, তাহলে দাবার নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতেই থাকতে পারে। অন্যদিকে, ইস্পোর্টস বিশ্বকাপের আয়োজকদেরও ফিদের সঙ্গে আলোচনা করে এগোনো উচিত, যাতে দাবার মর্যাদা অক্ষুণ্ণ থাকে। এখানে দুই পক্ষেরই আলোচনায় বসে সমাধান খুঁজে বের করা জরুরি।দাবার ইস্পোর্টস বিশ্বকাপে অন্তর্ভুক্তি নিয়ে বিতর্ক অব্যাহত থাকবে। তবে, এই পরিবর্তন দাবাকে নতুন দর্শকদের কাছে পৌঁছে দিতে পারে, যা খেলাটিকে আরও জনপ্রিয় ও সর্বজনীন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়তা করবে। ফিদে এবং ইভেন্ট আয়োজকদের মধ্যে সমন্বয় হলে এই সংঘাত একটি সুযোগে পরিণত হতে পারে, যা দাবা বিপ্লবের এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে।
আমি এই লেখাটি লিখতে বিভিন্ন পত্রিকার খবর এবং দাবা-সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটের মতামতের সহায়তা নিয়েছি।
বাংলায় দাবা বিষয়ে ভালো কন্টেন দেখতে আমার ইউটিউব চ্যানেল টি ঘুরে আসুন।